বাংলাদেশ থেকে নারী পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া একান্তভাবে কাম্য


মেয়েদের উপরে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করা সমগ্র পৃথিবীতে খুব সাধারণ একটা ব্যাপার হয়ে উঠেছে।মেয়েদের অধিকার, পড়াশোনা শিখিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনেক কথা আমরা শুনতে তো পাই, কিন্তু তা ফলপ্রসূ হচ্ছে আর কতদূর? হ্যাঁ, এটা অবশ্য ঠিক যে সমাজে উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েরা পড়াশোনা শিখে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পিছিয়ে থাকছে দরিদ্র ঘরের মেয়েরা। এদের বাড়ির লোক অর্থাভাবে অনেকসময় স্বেচ্ছায় কন্যাদায়গ্রস্ত থেকে মুক্তি পেতে এরা কিশোরী বয়সে উপনীত হওয়ার আগেই এদের বিবাহকার্য সম্পন্ন করে দেন তারপরে আর খোঁজ নেয়না এরা কেমন আছে বা কতটা সুস্থ জীবনযাপন করতে সক্ষম হচ্ছে।

যৌতুক না দিতে পারার কারণে অনেক মেয়েকে পুড়ে মরতে হয়, আবার অনেক মেয়েকে অর্থাভাবে রোজগার করার জন্য মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেহব্যবসায় নামতে হয়। তাদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বাইরে পাঠানো হয়, সেখানে পৌঁছানোর পরে এদের পাসপোর্ট, ভিসা কেড়ে নিয়ে জোর করে দেহব্যবসায় বাধ্য করানো হয়। তখন আর এই মেয়েগুলোর কিছু করার থাকেনা ও পতিতাবৃত্তিকেই তাদের জীবিকা ও ভাগ্য হিসেবে মেনে নেয়। সমাজের এই ''একঘরে'' থাকা মেয়েগুলোর আর কোনো সম্মান থাকেনা, প্রতিদিন বিভিন্ন পুরুষের দ্বারা বিভিন্নভাবে ধর্ষিত হতে হতে শরীর, মন সব শেষ হয়ে যায়।

যে সমাজে নারীরা এখনো সঠিকভাবে সুরক্ষিত নয় সেখানে যখন নারীর সমানাধিকারের ব্যাপারে কথা বলে, তখন সত্যিই খুব হাসি পায়।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান পারুল আকতার। দুবাই গিয়ে পুরোপুরি ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হন পারুল আক্তার। প্রথমে নাচ করতে বলা হলেও পরে জোরপূর্বক ওকে বিভিন্ন ছেলেদের ঘরে পাঠানো হতো।

সুমি ও হুসনা আক্তারের গল্পটাও এক। সৌদি আরবে টাকা রোজগার করার আশায় কাজ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে মালিকের দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছে। এরা দেশে ফিরতে সক্ষম হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের আধুনিক সমাজ কি এদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারবে? বা পুনরায় এদের সসম্মানে গ্রহণ করবে তো?

সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছেন আরও ৩৫ নারী। পরপর দুজনের উদ্ধারের ঘটনা দেখে তারাও ভিডিও প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান

ইচ্ছার বিরুদ্ধে দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার নামে পাচার করে দেশের বাইরে পাঠানো বা তাঁদের জোর করে দেহব্যবসায় নামানোর চক্রে যারা জড়িত সেই সকল ব্যাক্তিদের উপরে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নয়ত সমগ্র পৃথিবীতে এইভাবেই সবকিছু ক্রমশ চলতে থাকবে। এই ঘোর পাপকার্যের বিরুদ্ধে এবারে একটা পরিণাম হওয়া উচিত।

মানবাধিকার লঙ্ঘন করা বাংলাদেশের আইনী ব্যবস্থার অধীনে একটি জঘন্য অপরাধ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বাধ্য ও বাধ্যতামূলক শ্রম নিষিদ্ধ করেছে (অনুচ্ছেদ ৩৪) এছাড়াও দণ্ডবিধি ১৮৬০ (ধারা ৩৭২, ৩৭৩), অনৈতিক ট্রাফিকিং আইন দমন, ১৯৩৩ (ধারা ৪, ৭, ৮, ৯ ও ১০) এবং মহিলা ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার দমন আইন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে পাচার একটি বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ যার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

- Rahman Latifur
    

Comments

Popular posts from this blog

ভোটাধিকার সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার

বাংলাদেশের যুব উন্নয়ন দেশের উন্নতির চাবিকাঠি