চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন এক বৈপ্লবিক ইতিহাসের সূচনার আত্মকথা
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন বৈপ্লবিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে এই বিপ্লবের সূচনা হয়। ২২ শে মার্চ, ১৮৯৪ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই বিপ্লবী। সূর্য সেন হলেন এক বৈপ্লবিক সত্ত্বা ও সাহসিকতার জ্বলন্ত প্রতীক যিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।
চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের নেতৃত্বের এক অনন্য নাম হল সূর্য সেন। বিপ্লবী তরুণদের মধ্যে একজন পরামর্শদাতা, স্বাধীনতা সংগ্রামের কান্ডারী সূর্য সেন "মাষ্টারদা" নামে পরিচিত ছিলেন।
চট্টগ্রামে ব্রিটিশ সরকার প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে মাস্টারদা বেশ কয়েকটি সাহসী হামলা চালান। ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল, তিনি তাঁর সহকর্মীদের সাথে পুলিশের অস্ত্রশস্ত্র লুটপাট করে চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়ে প্রতিরোধ প্রতিষ্ঠা করেন। বিপ্লবের আগুন এইভাবে দাবানল হয়ে চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক বীজ বপন করে। মানুষ স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
কল্পনা দত্ত (২৭শে জুলাই ১৯১৩ - ৮ই ফেব্রূয়ারি ১৯৯৫) (পরবর্তী কল্পনা জোশী) ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন কর্মী এবং ১৯৩০ সালের সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ও সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। পরে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৪৩ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি পুরান চাঁদ জোশীকে বিয়ে করেন।
সমগ্র ব্রিটিশ সরকারের শাসন থেকে চট্টগ্রামকে স্বাধীনতা করার জন্য সূর্য সেন প্রথম বিপ্লব শুরু করেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রূয়ারির গোড়ার দিকে, চট্টগ্রামের গোপন এলাকা থেকে একটি গুরখা গোষ্ঠী কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, সুশীল দাস এবং মনিলাল দত্তের সাথে মাস্টারদা সূর্য সেনকে গ্রেফতার করে।
অবশেষে, ১২ই জানুয়ারি, ১৯৩৪ সালে এই মহান নায়কের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলি তাঁর ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকীর দিন তাঁকে প্রচুর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্মকর্তারা ফুল নিবেদনের মাধ্যমে এই স্বাধীনতা সংগ্রামীকে প্রচুর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ এবং কর্মী, সমাজতান্ত্রিক দল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন এই মহান বিপ্লবীকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানান।
সূর্য সেন স্বাধীনতার যে বীজ বপন করেন তা এখনো আমাদের রক্তে বিদ্যমান। আজ স্বাধীন বাঙালি এই নেতার ত্যাগ, মহিমা ও অবদানকে কোনোদিনও ভুলবে না। এক অমর অক্ষয় জ্বলন্ত সূর্য হিসেবে মাস্টারদা আমাদের হৃদয়ে সদা বিরাজমান থাকবেন। তাঁর স্বাধীনতার পথ অবলম্বন করে আমরা বিপ্লবী সত্ত্বার সূচনা করতে সক্ষমলাভ হব।
Comments
Post a Comment