বাংলাদেশে মেয়েদের শিক্ষা একটি প্রতিশ্রুতিময় যাত্রা


এই প্রচ্ছদটি একটি সিরিজের অংশ যা দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের শিক্ষা উন্নত করার জন্য পদক্ষেপ এবং সমাধানগুলি তুলে ধরে। বাংলাদেশ তার মানব উন্নয়ন সূচকগুলির উন্নতিতে অনেক অগ্রগতি করেছে, এটি দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে অনেকগুলি ব্যাপারে বেশ সগৌরবে ভালভাবে অগ্রসর হচ্ছে।

এই অর্জনগুলির মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে মেয়েদের শিক্ষা, যার জন্য বাংলাদেশ এখন মডেল হিসাবে দাঁড়িয়েছে।

নারীশিক্ষা কেন প্রয়োজন?

একজন নারীর পরিচয় কখনো মা, কখনো বোন আবার কখনো কারুর মেয়ে হিসেবে। এই দেশে প্রত্যেক মায়ের শিক্ষিত হওয়ার অত্যন্ত দরকার। একজন শিক্ষিত মা এক আদর্শ সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। কারণ তিনি তাঁর সন্তানকে প্রকৃত ও যথার্থ শিক্ষা দিয়ে যুক্তিবাদী করে তোলেন। আজ আমাদের সমাজ সুশিক্ষা ও সঠিক সংস্কারের অভাবে অবক্ষয়ের পথে এগিয়ে চলেছে। কুশিক্ষা, কুসংস্কার মানুষকে পিছনে টেনে আনে। সুশিক্ষা হল অগ্রগতির প্রাথমিক ধাপ ও তার জন্য নারীশিক্ষা অত্যন্ত আবশ্যক এক প্রয়োজনীয়তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আপনার ঘরের মা, বোন ও মেয়েকে যথার্থ শিক্ষা দিয়ে পড়াশোনা শিখিয়ে শিক্ষিত করে তুলুন। তবেই তারা ভালো মন্দের ব্যাপারে অবগত হবে। যতটুকু খারাপ আজ আমাদের সমাজে ঘটছে, তা একমাত্র কুশিক্ষার কারণেই। একজন মা তার সন্তানকে সঠিক পথ নির্বাচন করতে সাহায্য করেন, তাই তাঁর  পক্ষে শিক্ষিত হওয়াটা খুব জরুরি ব্যাপার।



মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা:

১৯৮০ সাল থেকে, মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় তালিকাভুক্তি ও ১৯৯৮ সালে ৩৯% থেকে ২০১৭ সালে ৬৭% এ অগ্রসর হয়।

এই অগ্রগতিটি বেশ কয়েকটি প্রণোদনার ফল, বিশেষ করে মহিলা মাধ্যমিক স্কুল সহায়তা প্রকল্প (এফএসএসএপি), যা ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে ও তারপর দেশব্যাপী এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে শুরু হওয়া থেকে লিঙ্গ সমতা অর্জনের জন্য সহায়ক ছিল।

FSSAP স্টিপেনডের গবেষণা অনুসারে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে মেয়েদের তালিকাভুক্তি বৃদ্ধি পায় ধীরে ধীরে ২০০০ সালের দিকে। এইভাবে নারীশিক্ষার প্রসার বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শহরাঞ্চলের মেয়েদের সাথে সাথে গ্রামাঞ্চলের মেয়েদেরও শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়াটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই শহরে তো স্কুল তৈরী শুরু হলো, কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা পিছিয়ে রইলো। তাই ধীরে ধীরে এই সমস্যা সমাধানের উপরে দৃষ্টিপাত করা হয়। গ্রামাঞ্চলের মানুষ অশিক্ষার কারণে অনেকটাই পিছিয়ে আর বেশিরভাগ পরিবার এতটাই দরিদ্র যে, তারা দুইবেলা ঠিকঠাক খেতে পাননা, তো মেয়েসন্তানকে লেখাপড়া কিকরে শেখাবেন? তার যে অনেক খরচ সেই কারণে তাড়াতাড়ি মেয়েসন্তানকে বিয়ে দিতে বাধ্য হতেন। এই কারণে প্রথমে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হলো। ধীরে ধীরে কন্যাসন্তানকে স্কুলশিক্ষার জন্য মা, বাবারা তাদের স্কুলে পাঠাতে শুরু করলেন। এইভাবে নারীশিক্ষার অভিযানের অধ্যায়ের সূত্রপাত ঘটে। 

সাফল্যের উপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক দরিদ্রতম শিশুদের জন্য দ্বিতীয় প্রজন্মের স্টিপেন্ড প্রোগ্রাম চালু করেছে যা ২.৩ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে উপকৃত করেছিল, যাদের মধ্যে ৫৫% মেয়ে ছিল।



২০১৭ সালের বাংলাদেশ শিক্ষা ব্যুরোর পরিসংখ্যান ও তথ্য থেকে জানা যায় যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষাগ্রহনের হার ৪২% বেশি। মাধ্যমিক স্তরে সমাপ্তির হার মাত্র ৫৯%।

ড্রপআউট হারের প্রকৃত ব্যাখ্যা:

শিশু বিয়ে, পারিবারিক দায়িত্ব, গর্ভধারণের উচ্চ মাত্রা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং স্কুল ভিত্তিক সহিংসতা হল কিছু মূল কারণ এবং পরীক্ষায় পাশ করতে না পারাটাও ড্রপআউট হার বৃদ্ধির এক উল্লেখযোগ্য কারণ।

বর্তমানে বাংলাদেশের নারী শিক্ষিত হচ্ছে এবং উল্লেখযোগ্য পদে জীবিকানির্বাহ করছে। নারীশিক্ষার অগ্রগতি বাংলাদেশ উন্নয়নের এক অধ্যায়। এইভাবে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মেয়েরা দেশের গর্ব। অনেক সংগ্রামের পরে তারা শিক্ষাঅর্জনের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছে।


- Rahman Latifur
    

Comments

Popular posts from this blog

ভোটাধিকার সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার

বাংলাদেশ থেকে নারী পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া একান্তভাবে কাম্য

বাংলাদেশের যুব উন্নয়ন দেশের উন্নতির চাবিকাঠি